
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা ৩ দিন বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে নোয়াখালীর হাতিয়া ও সূবর্ণচর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। এতে এ দুই উপজেলায় ২৩ হাজার ৬৫ হেক্টর ধান ও রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে কৃষকরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার মধ্যে হাতিয়ায় ১৯ হাজার ৯৯৫ হেক্টর এবং সুবর্ণচরে ৩ হাজার ৭০ হেক্টর ফসল রয়েছে। হাতিয়া ও সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলায় রোপা আমনের চাষ হয় ৬৮ হাজার ৫১ হেক্টর, তরমুজ ৮ হেক্টর, খেসারীর ডাল ২৪ হাজার ৯০০ হেক্টর, শীতকালীন শাক-সবজি ১৩ হাজার ২০০ হেক্টর, সরিষা ২০ হেক্টর, মাসকলাই ২০ হেক্টর, বোরো বীজতলা ১২৩ হেক্টর। এরমধ্যে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা ৩ দিন বৃষ্টিপাতের কারণে ৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর রোপা আমন, তরমুজ ৫ হেক্টর, শীতকালীন শাক-সবজি ৭৪২ হেক্টর, সরিষা ২০ হেক্টর, মাসকলাই ৭ হেক্টর, খেসারী ১২ হাজার ৪৫৬ হেক্টর, বোরো বীজতলা ১৫ হেক্টর ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
হাতিয়া উপজেলার চর কিং ইউনিয়নের চর কিং গ্রামের কৃষক রমিজ উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এনজিও থেকে লোন নিয়ে ২ একর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছি। ফসলও ভালো হয়েছে। চলতি মাসে ফসল ঘরে তুলে ধান বিক্রি করে এনজিওর ঋণ পরিশোধ করব বলে আশা করেছিলাম।'
'ধান কাটার ৮-১০ দিন আগে গত রবি, সোম ও মঙ্গলবারের টানা বৃষ্টিতে খেতের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন কীভাবে ঋণ শোধ করব, সেই দুশ্চিন্তায় ঘুম আসছে না', বলেন তিনি।

চর ঈশ্বর ইউনিয়নের খেসারী চাষি রুহুল আমিন জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ৩ একর জমিতে খেসারীর চাষ করেছেন। চারাগুলো মাত্র গজিয়ে উঠেছে। কিন্তু ৩ দিনের বৃষ্টিতে হাঁটুপানির নিচে পুরো খেত তলিয়ে গেছে।
একই কথা বললেন সোনাদিয়া, তমরদ্দি, বুড়িরচর, জাহাজমারা, হরনী ও চানন্দী ইউনিয়ন এবং হাতিয়া পৌরসভা এলাকার কৃষকরা।
সুবর্ণচর উপজেলার চর আমান উল্লাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, 'গত ৩ দিনের বৃষ্টিপাতে এই ইউনিয়নে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।'
তিনি সরকারের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা দেওয়ার দাবি জানান।

হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার প্রায় ২০ হাজার হেক্টর ধান ও রবি শস্যের ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে অনেক কৃষকের পথে বসার উপক্রম দেখা দিয়েছে। তাদেরকে সরকারিভাবে সহায়তার জন্য অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হবে।'
সুর্বণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অসময়ের বৃষ্টিপাতে সুবর্ণচরে রোপা আমন ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে যেসব কৃষক ধান কেটে মাঠে ফেলে রেখেছেন, তাদের ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া, উপজেলায় ২০ হেক্টর সরিষা এবং ২ হাজার হেক্টর খেসারী এবং ১ হাজার ৫০ হেক্টর শীতকালীন শাক-সবজির ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে চর আমান উল্লাহ ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে।'
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নোয়াখালী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাতিয়া ও সুবর্ণচর উপজেলায় ফসলের ক্ষতি বেশি হয়েছে। বাকি উপজেলাগুলোর হিসেব এখনও পাওয়া যায়নি। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া যাবে।'
Comments