
বাংলাদেশের নন্দিত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। টেলিভিশন-মঞ্চ-চলচ্চিত্র-বেতার সব মাধ্যমেই তিনি সফল। রক্তে আঙুর লতা, পারলে না রুমকি, কোথাও কেউ নেই সহ অনেক সাড়া জাগানো নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি, যেগুলো আজও দর্শকদের মনে গেঁথে আছে।
ঘুড্ডি, সুরুজ মিয়া, নতুন বউ, নয়নের আলো, শঙ্খনীল কারাগার তার অভিনীত জনপ্রিয় সিনেমা।
মঞ্চ নাটকেও তিনি খ্যাতি কুড়িয়েছেন। শকুন্তলা তার অন্যতম জনপ্রিয় মঞ্চ নাটক। এ ছাড়া কেরামত মঙ্গল, মুনতাসীর ফ্যান্টাসি, কীর্তনখোলা, জন্ডিস ও বিবিধ সেলুন নাটকে তার অভিনয় স্মরণীয় হয়ে আছে মঞ্চপ্রেমীদের কাছে।
আজ ২ ডিসেম্বর সুবর্ণা মুস্তাফার জন্মদিন। খ্যাতিমান এই শিল্পীর সঙ্গে মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাইসুল ইসলাম আসাদ। ঢাকা থিয়েটারের হয়ে এই ৪ জনের পথচলা বহু বছরের।
সুবর্ণা মুস্তাফাকে নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন আফজাল হোসেন, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাইসুল ইসলাম আসাদ।
আফজাল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টেলিভিশন নাটকে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি সুবর্ণার সঙ্গে। ঢাকা থিয়েটারে যুক্ত হওয়ার পর সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে আমার পরিচয়। তারপর দেখতে দেখতে বহু পথ আমরা একসঙ্গে পাড়ি দিলাম। এখনো আমরা একই পথে আছি। আমরা শিল্পের বন্ধু। এভাবেই শিল্পের পথে বন্ধু হয়ে থাকতে চাই বাকিটা জীবন।'

'সুবর্ণা, রাইসুল ইসলাম আসাদ, হুমায়ুন ফরীদি এবং আমার মঞ্চে বেড়ে ওঠা, কাজ করা একই সময়ে। জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময়গুলো, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো ঢাকা থিয়েটারের হয়ে মঞ্চে একসঙ্গে কাটিয়েছি আমরা। সেই স্মৃতি কখনোই ভোলার নয়।'
'আমাদের সবকিছু ছিল একটা সময়ে থিয়েটারকেন্দ্রিক। পরস্পরকে কাছ থেকে দেখা, বন্ধুত্ব, বিশ্বাস, সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ সব কিছু থিয়েটার করতে গিয়ে হয়েছে। দুজনই দুজনের কাছ থেকে পেয়েছি, শিখেছি এবং শিখছি।'
'আমি মফস্বল থেকে আসা একজন মানুষ। সুবর্ণা এই শহরেই বেড়ে উঠেছেন। ওর সবকিছু শহরে। বিখ্যাত শিল্পী পরিবারে জন্ম নেওয়া গুণী বাবার সন্তান তিনি।'
'টেলিভিশন নাটকে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি সুবর্ণার সঙ্গে। সবচেয়ে আলোচিত হয়েছি দুজনে। জুটি হিসেবে মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছি প্রবলভাবে। সুবর্ণা-আফজাল নামটি আজও উচ্চারিত হয় মানুষের কাছে। এটা বড় একটি অর্জন।'
'টেলিভিশন নাটকে শুধু তো অভিনয় নয়? ক্যামেরা সামনে দাঁড়ানোর পর জুটি হিসেবে সংলাপের আদান প্রদানটা জরুরি। যা কিনা দুজনের মধ্যে খুব সহজে হয়ে যেত। কখনো অমি সংলাপ ভুল করলে সুবর্ণা শুধরে দিয়েছেন, আবার সুবর্ণা ভুল করলে আমি শুধরে দিতাম। কখনো কখনো কাজ নিয়ে অনেক আলোচনা করেও নিতাম দুজনে। ভালো বন্ধু বলেই সম্ভব হয়েছিল।'
'শিল্পের বাইরে আমরা একইরকম চিন্তা ও চেতনার মানুষ। কাজেই বন্ধু হিসেবে সুবর্ণা এবং ওই সময়ের থিয়েটারের বন্ধুদের বড় ভূমিকা আছে আমার জীবনে। সবশেষে বলব আমরা একত্রে অনেককাল হেঁটেছি। এখনো হাঁটতে পারছি। এটা সবাই পারে না। আমরা পারছি।'
'সুবর্ণা এখন কানাডায়। দুইদিন আগেও কথা হয়েছে। আমিও কিছুদিন আগে আমেরিকায় ছিলাম। দেশের বাইরেও আমাদের দুজনের কমন কিছু বন্ধু আছেন।'
'সুবর্ণার অভিনয় নিয়ে কী বলব? সবাই ভালো করে জানেন কতটা ভালো অভিনেত্রী তিনি। কৈশোর ও যৌবনে অসাধারণ অভিনয় করেছেন। অভিনয় দিয়ে মানুষের মনে বড় একটি জায়গা করে নিয়েছেন। কজন পারে এটা?'
মানবিক এবং স্পষ্টবাদী মানুষ সুবর্ণা: পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়
'সুবর্ণাকে চিনি বহু বছর ধরে। তার সবচেয়ে বড় গুণ অসম্ভব মানবিক মানুষ তিনি। অসম্ভব যুক্তিবাদী মানুষ। সেই সঙ্গে অসম্ভব স্পষ্টবাদী মানুষ।
ঢাকা থিয়েটারের হয়ে মঞ্চে অনেক নাটকে কাজ করেছি আমরা। আবার টেলিভিশনেও অনেক নাটকে একসঙ্গে অভিনয় করেছি। সেইসব স্মৃতি মনে পড়ে। মঞ্চে শকুন্তলা নাটকে সুবর্ণার অভিনয় আমার মনে গেঁথে আছে। আরও অনেক নাটকেই দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। কিন্তু শকুন্তলা নাটকের কথা বলতেই হচ্ছে। সুবর্ণার কথা বলতে গেলে শকুন্তলা নাটকের কথা আসবেই। নাটকটিতে অন্য এক সুবর্ণাকে পেয়েছি।
টেলিভিশনে কয়েকটি কালজয়ী নাটকে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। গ্রন্থিকগণ কহে ধারাবাহিক নাটকটির কথা বলতেই হয়। এই নাটকে সুবর্ণার অভিনয়ের দৃশ্যগুলো চোখে ভাসে। আমিই নায়ক ছিলাম নাটকটির।
বড় কথা হচ্ছে শিল্পীর ঘরে জন্ম তার। বাবা নামী শিল্পী ছিলেন। তার বাবার সঙ্গেও আমার সখ্যতা ছিল। অভিনয়ও করেছি। বাবার অভিনয়ের গুণটা পেয়েছেন সুবর্ণা। আবার ইংরেজি সাহিত্যে পড়ালেখা করা একজন রুচিশীল মানুষ। প্রচণ্ড ব্যক্তিত্ববান তো বটেই।
সেই কৈশোরে এসে অভিনয় শুরু করেছিলেন। ক্লাস এইট কি নাইন হবে। আজও আমার চোখে সুবর্ণা তেমনি আছেন।

সিনেমায় প্রথম নায়িকা হিসেবে পেয়েছিলাম সুবর্ণাকে: রাইসুল ইসলাম আসাদ
'সুবর্ণা আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু। ঢাকা থিয়েটার থেকে আমাদের পরিচয়। তারপর কত বছর কেটে গেছে। আজও সম্পর্ক অটুট আছে। চিরদিন থাকবে।
ঘুড্ডি সিনেমায় নায়িকা হিসেবে তাকে পেয়েছিলাম। নায়ক হিসেবে ঘুড্ডি আমার প্রথম সিনেমা। আর আমার নায়িকা সুবর্ণা। ঘুড্ডি সিনেমা করতে গিয়ে অনেক স্মৃতি আমাদের। অনেক সুখের ঘটনা আজও মনে গেঁথে আছে।
ঘুড্ডি হিট করে। আজও ঘুড্ডির প্রসঙ্গ এলে আমাদের দুজনের কথাও উঠে আসে। ভালো লাগে কথাগুলো শুনতে। ঘুড্ডির পর নায়িকা হিসেবে না পেলেও আরও অনেক সিনেমা করেছি দুজনে। সুরুজ মিয়া, নয়নের আলো, নতুন বউ, গহীন বালুচরের নাম এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি।
মঞ্চে কাজ করেছি মুনতাসীর ফ্যান্টাসি, শকুন্তলা, কীর্তনখোলা নাটকে। মঞ্চ, টেলিভিশন, বেতার, চলচ্চিত্র সবক্ষেত্রে একজন সফল অভিনেত্রী সুবর্ণা। জোর দিয়ে বলব পরিপূর্ণ শিল্পী সুবর্ণা, সফল শিল্পী সুবর্ণা। অবশ্যই খুব বড় মাপের একজন অভিনেত্রী তিনি।
Comments